Thursday, September 23, 2021

টোকাই যখন মাফিয়া কিং-- সিজন:- ২--- পর্ব:- ৩




 মাফিয়া সিরিজ ৩


# টোকাই যখন মাফিয়া কিং 

# RAJA Bhuiyan (মি.440)

#সিজন:- ২

#পর্ব:- ০ ৩


.................



আজ প্রায় তিন দিন পরে আবির কলেজে যাচ্ছে। আগের মতো করেই একই ড্রেস আপ নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছে সে। এখন একটাই ভয় কাজ করে আবিরের মনের ভিতর যদি নাহিদের সাথে দেখা হয়ে যায় কোনো ভাবে। আর নাহিদ যদি বলে বসে রকি কোথায়। কি জবাব দিবে তখন আবির,, মুখের ভাষা কোথায় হাড়িয়ে যাবে সে সময়। রকির সাথে থেকে না হয় সেদিন বেঁচে গেছিলো কিন্তু আজ বাঁচাবে কে। শয়তানের নাম নিতে না নিতে শয়তান এসে উপস্থিত হয়ে গেছে। নাহিদ তার বন্ধুদের নিয়ে সেই আগের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এখন যদি আবির ক্লাসে যায় তাহলে নাহিদ দের সামনে দিয়েই যেতে হবে। আবির কোনো কিছু না ভেবেই ক্লাসের দিকে হাঁটা ধরে। সামনে গেলে যে বিপদ এটা যেনেও আবির থামে না। 


.... .... ... .... … … … …



“ নাহিদ সামনে তাকিয়ে দেখ আবির আসতেছে। ”



প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও নাহিদ বাইকের উপর আরাম করে বসে সিগারেট টানছে আর সামনে দিয়ে চলে  যাওয়া মেয়ে গুলোর সাথে ইভটিজিং করছে। রকি সেদিন যখন ভার্সিটির সকলের সামনে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে নাহিদ কে মেরেছিলো। সেদিন থেকেই নাহিদের একটাই প্রতিজ্ঞা সেটা হলো রকি কে নিজ হাতে মারা। রকিকে এখন  আর শহরে দেখা যায় না। যদি নাহিদের সামনে রকি পরে যায় তাহলে রকিকে শেষ করে দিবে নাহিদ। আরাফের কথা শুনে নাহিদের  মুখ থেকে জ্বলন্ত সিগারেট টা নিচে পরে যায়। এটা নাহিদ কাকে দেখছে,, আবির!  সে বেচে আছে কি করে। নাকি মৃত্যুর পর আত্মা হয়ে এসেছে। আত্মা হলে তো নাহিদ একাই দেখতো,, কিন্তু আরাফও সাথে দেখেছে। তাহলে এটা আবিরের আত্মা না সত্যি সত্যিই আবিরই এটা। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব,, আবির বেঁচে আছে। তাহলে!! 


 নাহিদ উওেজিত হয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে :-



• সামনে যে আবির আসছে এটা কি আরো কেউ দেখতে পারছিস,, নাকি আমি আর আরাফই দেখছি শুধু।( নাহিদ ) 



 সবাই অন্য রকম দৃষ্টিতে নাহিদের দিকে তাকায়,, ছেলেটা কি বলছে এটা,,, সামনে দিয়ে আবির নামের ছেলেটা তো স্ব শরীরে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসছে। তাহলে নাহিদের এমন বলার কারণ কি। পাগল হয়ে যায় নি তো আবার,, বলাও যায় না,, নাহিদ যেই ভাবে প্রতিদিন মদ পান করে নেশা করে,, এর প্রতিত্রুিয়ায় হয়তো মাথার তার ছিড়ে গেলে। নাহিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিফাত বলে :-



• আমি তো আবির কে ভালো করেই দেখতেই পাচ্ছি। কেমন যেন  ক্ষেত টাইপের ছেলেটা,, বোকাসোকা চেহারা। অন্য রা দেখছে কি না এটা আমি জানি না। (রিফাত)



 রিফাতের কথা শুনে সবাই হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিতে মাথা  নাড়ায় যার মানে সবাই আবির কে দেখতে পাচ্ছে। নাহিদ অবাক হয়ে যায় আবিরকে এমন ভাবে ক্যাম্পাসে আসতে দেখে। 



• আরাফ আবিরকে ডাক দে আর আমার সামনে আসতে বল তাড়াতাড়ি। (নাহিদ) 



 নাহিদের বলা কথায় আরাফ একটু জোরেই আবির কে ডাক দেয় :-



• আবির! এই আবির... কানে শুনতে পাস না নাকি,, এদিকে আয় নাহিদ ডাকছে তকে। (আরাফ)




 আরাফ অনেক টা জোরেই আবির কে ডাক দিয়েছে যার কারণে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে থাকা আড্ডা দেওয়া স্টুডেন্ট গুলো সেদিকে নজর দেয়। আবির আরাফের ডাক শোনে সেদিকে তাকায়,, নাহিদের পাশে সারাদিন চাকরের মতো বসে থাকে আরাফ। ছেলেটা পুরো ই একটা ফাউল,, নিজের বাবার নেই কিছু অন্য জনের ক্ষমতা বিক্রি করে খায়। আবির সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে এই আরাফ ছেলেটাকে। আবির যেয়ে একেবারে নাহিদের সামনে দাঁড়ায়।  আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এটা যে নাহিদ আবিরের এমন দূর সাহস দেখে কিছু বলছে না। নাহিদ কি কোনো কারণে আবিরের উপর ভয় পেয়ে আছে। নাহিদ কে দেখে তো এমন মনে হচ্ছে না । আগে কেউ কখনো এমন ভাবে নাহিদের সামনে এসে কাছাকাছি দাঁড়ায় নি। এই প্রথম আবির এমন করলো। গত এক বছর ধরে আবির এই ক্যাম্পাসে আসছে। কিন্তু নাহিদ তেমন কঠোর ভাবে আবির কে কখনো র্যাগ দেয় নি। ব্যাপার টা খুবই রহস্যজনক। 



 আবির এমন করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আরাফ রেগে বলে- 



• আবির তুই রকির সাথে দুইদিন চলেফিরে মনে হয় সাহস টা একটু বেরে গিয়েছে। নাহিদের সামনে এসে এমন কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছিস কেনো দূরে যেয়ে দাঁড়া। (আরাফ)




• আরাফ ভাই তুমার সমস্যা কোথায়,, নাহিদ ভাইয়ের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি,, ওনি কিছু বলছে না তুমি এত লাফালাফি করছো কেন?? (আবির)




• দেখ আবির আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। আর যদি একটা কথা বলিস তাহলে কিন্তু আমি কি করতে পারি সেটা তুই  বুঝতেই পারছিস । (আরাফ)




• যা করার করে ফেলো,, আমি এখন কাউকে ভয় পাই না। (আবির)



 নাহিদ চুপ করে বসে আছে,, আবির আর আরাফের ঝগড়ার মতো কথাবার্তা শুনে যাচ্ছে, কাউকে কিছু বলছে না। দুজনের নামের প্রথম অক্ষর অ দিয়ে শুরু,, আবার নামের মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। তাদের দুজনের উচিত ছিল নিজেদের মধ্যে বন্ধ সূলভ আচরণ করা কিন্তু তারা এটা না করে বাচ্চাদের মতো  ঝগড়াঝাটি করছে।

আরাফ যখন  রেগে আবির কে মারতে যাবে যাবে তখনই নাহিদ হাত দিয়ে  আরাফ কে বাঁধা দেয়। সবাই অবাক হয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে,, আবির মাথাটা নিচু করে মুচকি হাসি দেয়। 


নাহিদ নিজের নিরবতা ভেঙে বলে:-


• আরাফ আবিরের কথা টা কিন্তু সঠিক। সে আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে আমি কিন্তু তাকে কিছু বলি নি তাহলে তুই এমন করছিস কেনো। (নাহিদ)




• কি বলছিস এটা তুই নাহিদ। আবিরের মতো ক্ষেত একটা ছেলে তর সামনে এসে এভাবে দাঁড়াবে এটা দেখে আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবো। (আরাফ)




• সব সময় সব জায়গায়,, সবার সাথে মাথা গরম করে কথা বলতে নেই। হয়তো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক টা অনেক বড় কিছু হতে পারে। (নাহিদ)




• এটা আমি জানি। কিন্তু এখনে সেই বড় ক্ষমতাবান লোকটা কোথায়। (আরাফ)



• হয়তো নেই আবার আছে। এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে রহস্য। এখন এগুলো বাদ দে। পরে এটা নিয়ে কথা হবে। এখন আবির তকে যেই কারণে ডেকেছি। (নাহিদ)



• জ্বি ভাইয়া বলেন। (আবির)



 নাহিদের চোখ যায় আবিরের মাথার দিকে,, এতক্ষণ নাহিদ দেখেই নি যে আবিরের মাথায় সাদা কাপড়ের বেন্ডেজ করা। আবির কি তাহলে মাথায় কোনো বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। না হলে তো মাথায় এমন সাদা কাপড় দিয়ে বেন্ডেজ করা থাকতো না। কিন্তু আবির আঘাত পেয়েছে কিভাবে। 


নাহিদ আবির কে প্রশ্ন করে :-



• আবির তর কপালে এমন বেন্ডেজ করা কেন?  মাথায় কিভাবে ব্যাথা পেয়েছিস। (নাহিদ)



উপস্থিত সবাই আবিরের কপালের দিকে তাকায় ,, সত্যি ছেলেটা বড় কোনো আঘাত পেয়েছে,, সাদা কালারের বেন্ডেজের উপর রক্তের দাগ লেগে আছে। আবির নিজের কপালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে। :-



• তেমন কিছু না ভাই, রাস্তায় পরে গিয়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছি। (আবির)



• মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজন নেই। আমি জানি তুই কিভাবে ব্যাথা পেয়েছিস। (নাহিদ)




 আবির অবাক হয়ে বলে :-



• আপনি জানেন মানে কিভাবে। আমার ব্যাথা পাওয়ার কথা আমি ছাড়া বাইরের কেউ জানে না,, আপনি কিভাবে জানলেন। (আবির)




• আমি তকে উওর দিতে বাধ্য নই। এখন তুই এটা বল যে তর কাছের বন্ধু রকি কোথায়। আমাকে সামান্য  মেরে ত চলে গেছে। আর ক্যাম্পাসে আসে না। (নাহিদ)




 আবির যেটার ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হয়েছে। আবির একটা জিনিস বুঝতে পারছে না কিছুদিন ধরে সে যেগুলো ভাবছে তা সত্যি সত্যি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নাকি ভোরে সপ্ন দেখলে তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবির দিনের বেলা যা চিন্তা করে ওর সাথে ঠিক তেমন টাই ঘটে। এর মধ্যে কোনো মিস যায় না । আজকে সে ভার্সিটিতে আসার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলো ক্যাম্পাসে নাহিদের সাথে দেখা হলে সে যদি রকির কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে। এখন সেই কথাটার বাস্তব বলে নাহিদ প্রমাণ করে দিলো। আবির জানে নাহিদ অনেক খারাপ একটা ছেলে,, যখন তখন খারাপ কিছু করে দিতে পারে। এখন যদি আবির বলে সে জানে না রকি কোথায়, তাহলে নাহিদ কি করবে সেটা বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছে আবির।



আবির মিথ্যা কথা বলতে পারে না,, মুখ দিয়ে আটকে যায় মিথ্যা কথা বলার সময়। আবির আর কিছু ভাবতে চায় সত্যি কথা বলে দিবে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সে। 




• ভাইয়া আমি আসলে জানি না রকি এখন কোথায়। সেই দিন আপনাদের সামনে যে আমার সাথে কথা বলে ছিলো এটাই আমার সাথে শেষ কথা হয়েছিলো রকির সাথে। (আবির)




 নাহিদ মুচকি হাসে আবির যে মিথ্যা  কথা বলছে এটা বুঝে গেছে সে। 




• তাই নাকি রকির সাথে তর কথা হয় না। রকির মতো এমন একটা ছেলে ভার্সিটিতে এসেই তর সাথে প্রথম বন্ধুত্ব করে আর তুই এখন বলছিস তর সাথে রকির কোনো যোগাযোগ নেই। (নাহিদ)




• সত্যি কথা! ভাই বিশ্বাস করেন আমাকে।  আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না,, মিথ্যা কথা বলতে গেলেই আমার কথা আটকে আসে। (আবির)




• এখন বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। সামনে আমার বাবা মেয়র নির্বাচন করবে। এখন আমি কারো সাথে কোন প্রকার ঝামেলা করবো না। আবির তুই এখন যেতে পারিস।  (নাহিদ)




 আবির নিজের মুখ টা নাহিদের কানের কাছে নিয়ে যায় আর ফিস ফিস করে বলে :-




• সিংহ জঙ্গলে চুপ করে থাকে দেখে মনে করো না তার কোনো পাওয়ার নেই। যখন সে রেগে যায় তখন তার এক গর্জনে জঙ্গল কিন্তু কেঁপে উঠে। (আবির)




 আবির নাহিদের কানের কাছ থেকে নিজের মুখ টা সরিয়ে নেয়। আবির নাহিদের থেকে একটু দূরে যেয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে একটা রহস্যময় মুচকি হাসি দেয়। 



… … নাহিদ তো পুরাই অবাক আবিরের মতো এমন একটা বোকা ছেলে এত রহস্যময় কথা আবার রহস্যময় মুচকি হাসি দিতে পারে। কে এই আবির জানা নেই কারো। আবিরের  একটাই পরিচয় জানে সবাই সেটা হলো সে একটা গরীব এতিম ছেলে,, ভার্সিটির পাশের বস্তিবাসীর সাথে থাকে সে। ছোট্ট বেলা নাকি আবিরের মা বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় আর সেই থেকে আবির এখনো একা এই পৃথিবীতে। 



 • নাহিদ তুই আবিরকে এমন ভাবে ছেড়ে দিলি কেনো। ব্যায়াদপ টা অতি বেড়ে গেছে,, নতুন পাখা গজিয়েছে। ওর এই পাখা আমি ভেঙে দিবো। (আরাফ)




• নাহ্ ,, এখন এমন ভুল করা যাবে না সামনে বাবার মেয়র নির্বাচন আমি কোনো ঝামেলা করবো না। আমি চাই তরা সবাই এখন ঝামেলা থেকে মুক্ত থাক। (নাহিদ)




• আবির সালা কে আমার এক বিন্দুর জন্যও সহ্য হয় না। আরেক বার কাছে পেলে সুযোগ মতো ঠিক করে দিবো। (আরাফ)



• নির্বাচন টা শেষ হতে দে আগে। তারপর আমি নিজে আবিরের ব্যবস্থা করবো। সালা কে এমন মার দিবো যে কখনো আর এমন বড় বড়  কথা বলার সুযোগ পাবে না । (নাহিদ) 



.... …,… … ….... 



 মিমের বয়স বাইশ বছর চলে। 


 একজন রূপসী মেয়ের যা যা থাকতে হয় সব গুন ই মিমের মধ্যে বিদ্যমান। গায়ের রঙ সাদা। গড়গড়তা মেয়েদের তুলনায় মিম অনেক টা লম্বা। কাটা কাটা চোখ মুখ,, ঠোঁটের নিচে চোখে পরার  মতো কালো তিল। তবুই মিমের ধারণা  তার চেহারা অতি সাধারণ। আবার বাজেও। মিমের এমন মনে হওয়ার অনেক কারণ আছে এর মধ্যে একটা হলো বিয়ে। মিম কে আজ পর্যন্ত অনেক ছেলে পক্ষ  বিয়ের জন্য  দেখে গেছে কিন্তু কেউ মিম কে পছন্দ করে নি। কারণ মিম রান্নাবান্না কিছুই পারে না। ছেলে পক্ষের লোক প্রথমে এসেই জিজ্ঞেস করে,, মেয়ে রান্না জানে তো বিয়ের পর স্বামী কে রান্না করে ঠিক মতো খাওয়াতে পারবে তো। এমন কথা শুনে মিমের বাবা আশরাফ সাহেব ছেলে পক্ষ কে না করে দেয়। মিমের চেহারা দেখে সব ছেলেরা পাগল হওয়ার মতো কিন্তু মিমের ঐ একটাই সমস্যা রান্না করতে পারে না। অবশ্য মিম নিজেও চায় না  রান্না শিখতে,, রান্না শিখে ফেল্লে যে কোনো ছেলে পক্ষ মিম কে নিতে রাজি হবে। মিম চায় না মা বাবা কে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে তো স্বামীর ঘরে যেতেই হবে। এখন মিম বাসায় থাকলে তার একটাই কাজ মায়ের সাথে রান্না ঘরে রান্না শিখা। মিম এতে খুবই বিরক্ত বোধ করে।



 আজ দুই দিন পর মিম  বাসা থেকে বের হয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্য। এই দুইদিন সে মায়ের সঙ্গে রান্না শিখেছে। অনেক টা শিখে গেছে রান্না। মিমের রান্নার প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণ নেই। ক্যাম্পাসের মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে প্রিতি।  মিমের সাথে ১ম বর্ষে পড়ে সে। এখন বলতে গেলে প্রিতি আর মিম দুইজন খুব ভালো বন্ধু। তাদের মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মিম লম্বা লম্বা পায়ে এসে প্রিতির সামনে দাঁড়ায়। 



প্রিতি মিম কে দেখে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকায়,, ঠিক পনেরো মিনিট লেট করেছে মিম। 


প্রিতি রেগে বলে:-


• এই তর আসার সময় হলো,, সেই কখন ফোন করে বলেছিলি অপেক্ষা করতে আর পাঁচ মিনিট লাগবে। এই তর পাঁচ মিনিট। (প্রিতি)



• আমি অনেক অনেক দুঃখীত প্রিতি। আসলে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ফোন করেছিলাম তকে,, যদি সঠিক সময়ে রিকশা পেয়ে যেতাম তাহলে ঠিকই চলে আসতাম। (মিম)




• পাঁচ মিনিটের রাস্তা সেটাও নাকি রিকশা দিয়ে আসতে হয়। (প্রিতি)




• ক্যাম্পাস থেকে আমার বাসা পাঁচ মিনিটের দূরত্ব  না। আরো বেশি সময় লাগে আসতে। (মিম)




• হয়েছে হয়েছে থাম এবার তুই,, ক্যাম্পাস থেকে তর বাসা কত টুকু দূরত্ব সেটা আমার জানা আছে। এখন এটা বল ,, গত শুত্রুবারে যে ছেলে পক্ষ তকে দেখতে এসেছিলো তারা কি বলে গেছে। (প্রিতি)




• আর বলিস না ছেলেটার কথা,, আমার থেকে অনেক খাটো,, আমি আর সে যাদি এক সাথে দাঁড়াই তাহলে আমার থেকে পাঁচ থেকে  ছয় ইঞ্চি ছোট দেখাবে। (মিম)




• এত ছোট হবে না মনে হয় তর থেকে। তা ছেলেটার চেহারা সম্পর্কে কিছু বল আমাকে। (প্রিতি)



• মুখ টা সাদা, ক্লিন শেপ করা ,, নাকের নিচে হিটলারী গোফ রেখেছে। মাথায় চুল তেমন একটা নেই বল্লেই চলে। কেমন যেন দেখতে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ছেলেটা ছিলো ব্যাংকার। (মিম)




• বুঝতে পেরেছি,, এখন তর বাবা মা কি বল্লো ছেলে পক্ষ কে। (প্রিতি)



• কি আর বলবে, বলেছে পরে জানানো হবে তাদের। এরপর আর কি হয়েছে আমি তা জানি না। (মিম)



• ক্লাসের সময় হয়ে এসেছে,, চল ক্লাসের দিকে যাওয়া যাক। (প্রিতি)



 মিম আর প্রিতি ক্লাসের দিকে রওনা দেয়,, তখনই........... 



wait for the next part. 



অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ :

https://facebook.com/groups/996977107509672/

Wednesday, September 22, 2021

টোকাই যখন মাফিয়া কিং:- সিজন :- ২ -- পাঠ :- ২ -- RAJA Bhuiya. (মি.440)



মাফিয়া সিরিজ ২


# টোকাই যখন মাফিয়া কিং 

# RAJA Bhuiyan (মি.440)

#সিজন:- ২

#পর্ব:- ২


.................


  লোকটাকে দেখে  আবিরের ভয় পাওয়ার অবশ্য একটা কারণ আছে। সেটা হলো -- রুমের দরজার ঠেলে একজন ডাক্তার প্রবেশ করে পরনে তার সাদা কালারের অ্যাপ্রোন মুখে মাক্স,, একটা ইনজেকশন হাতে নিয়ে আবিরের সামনে দাঁড়ায়। আবির ছোট থেকেই ইনজেকশন কে অনেক ভয় পায়৷ বলতে গেলে কখনো বড় ধরনের অসুখ হলেও শরীরে ইনজেকশন পুশ করে না। কিন্তু আজকে সামান্য মাথা ব্যাথার জন্য ইনজেকশন নিবে এটা কি করে সম্ভব।  


 ডাক্তার সাহেব আবিরের  শরীর থেকে স্যালাইনের সুচ টা খুলে ফেলে। তুলার মধ্যে স্যানিটাইজা নিয়ে আবিরের হাতে লাগায়। ইনজেকশন টা ঠিক করে ডাক্তার সাহেব আবিরের হাতে পুশ করতে যাবে তখনই আবির নিজের হাত টা সরিয়ে নেয়। আবির এতক্ষণ বেডের উপর  শুয়ে ছিলো। এখন সে  উঠে বসে,, বেডের সাথে  হেলান দিয়ে বসে। আবিরের এমন কান্ডে  ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে যায়। আবির কে দেখে মনে হয় না সে একজন মানসিক রোগি। কোনো মানসিক রোগি ছাড়া সুস্থ ব্যক্তি  এমন কিছু করতে পারে না। ডাক্তারি জীবনে এই প্রথম একজনকে পেয়েছেন তিনি,, যে কি না মারাত্মক অবস্থায় থেকেও ইনজেকশন নিতে ভয় পাচ্ছে। 


ডাক্তার সাহেব আবির কে প্রশ্ন করে :-



• মি.আবির কি হয়েছে আপনার আপনি এমন করে হাত সরিয়ে নিলেন কেনো??  আমাকে ইনজেকশন পুশ করতে দিন। (ডাক্তার) 



 ডাক্তারের কথা শুনে আবির ভয় পাওয়া কন্ঠে জবাব দেয় ;-



• আসলে আমি কখনো ইনজেকশন নেই না। ছোট থেকেই এটা আমার বড় সমস্যা। ইনজেকশন দেখলেই আমার বুক কাঁপাকাপি করে। (আবির)




• এটা আবার কেমন কথা! আপনি এত বড় একটা ছেলে হয়ে সামান্য ছোট ইনজেকশনকে ভয় পাচ্ছেন কেনো। আর এমনিতেই আপনার মাথা ব্যাথা কমানোর জন্য এই ইনজেকশনের প্রয়োজন। (ডাক্তার) 




• আমার মাথা ব্যাথা আগের থেকে অনেক টা কমে গেছে । (আবির)



• দেখেন আমি একজন ডাক্তার! আপনার চেয়ে আমি রোগীর রোগ সম্পর্কে ভালো জানি। (ডাক্তার) 



•  আমি কখন এখন থেকে যেতে পারবো সেটা বলেন। (আবির)



• আপনি এত অস্থির হচ্ছেন কেনো। আপনার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। আর কিছুক্ষণ পর মেহেরাজ সাহেব আপনার সাথে দেখে করে আপনাকে নিয়ে চলে যাবে। (ডাক্তার) 



• কেন কেন?  আমি ঐ পুলিশ অফিসারের সাথে কেনো যাবো। আমি আমার বাসায় একা একাই যেতে পারবো। (আবির)



• আমি এতকিছু জানি না। তবে আমার মনে হয় মেহেরাজ স্যার আপনাকে কোনো কিছুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বাদ করবেন। (ডাক্তার) 



 আবির বুঝে গেছে পুলিশ অফিসার কি জিজ্ঞেস করবে। আবির নিজেকে প্রস্তুুত করে নেয়। ডাক্তার সাহেব বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আবিরের দৃষ্টি এখন সেই দিকেই। 


……………………………



 প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে সন্ধ্যার দিকে আবিরকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। মেহেরাজ নিজের কেবিনে বসে আছে সামনে একটা লাঠি হাতে নিয়ে  দাঁড়িয়ে আছে শেখর। মেহেরাজ চেয়ারের হেলান দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মাথায় একটা জিনিস কিছুতেই আসতেছে না। আবিরের মতো এমন  একটা ছেলে। নাহ্ আর কিছু ভাবতে পারছে না মেহেরাজ। 



শেখর মেহেরাজের এমন চিন্তা মগ্ন চেহারা দেখে বলতে থাকে :-



• স্যার আপনি কি এমন ভাবছেন। আর আমি কতক্ষণ এইভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবো। অনেক তো হলো আপনি তো কিছু বলছেন না। [শেখর)




 মেহেরাজ শেখর কে প্রায় পনেরো থেকে বিশ মিনিট আগে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠায়। শেখর তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। কিন্তু এসে দেখে মেহেরাজ মাথা উপরের দিকে করে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষন পর শেখর মুখ খুলেছে। শেখরের কথায় মেহেরাজ উপর থেকে দৃষ্টি টা সরিয়ে নেয়, আর শেখরের উপর দৃষ্টি ফেলে মধ্যে বয়সী এই লোক টা যদি পুলিশের কনস্টেবল না হয়ে বড় কোনো অফিসার হতো তাহলে বেশ মানাতো তাকে। শেখরের অনেক সাহস,, যেমন কিছু দিন আগে এলাকার একটা মাস্তান কে সে নিজ হাতে ধরে থানায় ভিড় করিয়েছে। যেখানে মাস্তান টা কে ধরতে কেউ সাহস করে না সেখানে শেখর একাই কাজ টা করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় শেখর এই কাজ টা করার জন্য কোনো প্রমোশন পায় নি। মেহেরাজ সব সময় শেখর কে নিজের কাছাকাছি রাখে। 



এবার মেহেরাজ শেখরের কথার জবাব দেয় :-



• শেখর হাতে এখন দুইটা কেস চিন্তা আমার আকাশ ছুই ছুই অবস্থা। কোনটা আগে ধরবো সেটাই বুঝতে পারছি না। (মেহেরাজ) 




• স্যার আবির নামের ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলেই মনে হয় একটা কেসের সমস্যার সমাধান হবে। (শেখর)




• শেখর আমার কি মনে হয় জানো। আবির ছেলেটার সাথে অন্য জগতের কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। (মেহেরাজ) 




• আমারও তাই মনে হয় ছেলেটা খুবই বোকা সোকা। সে হাসপাতালে আমাদের দেখে বাচ্চাদের মতো ভয় পাচ্ছিলো। (শেখর)




• আমি আবির কে ভয় পেতে দেখি নি। আবিরের চোখে আমি ভয় দেখি নি,, অন্য কিছু দেখেছি। কিন্তু কি দেখেছি সেটার রহস্য টা এখনো দূর হয় হচ্ছে না। (মেহেরাজ) 




• আমি স্যার এতকিছু লক্ষ্য করি নি। তবে আবির ছেলেটা অনেক রহস্যময়ী মনে হচ্ছে। (শেখর) 



• ডাক্তার যে বল্লো সন্ধ্যায় আবিরকে রিলিজ দিয়ে দিবে,, এর আগেই কিন্তু আমাদের কে হাসপাতালে থাকতে হবে। (মেহেরাজ) 



• স্যার তাহলে কি গাড়ি বের করবো। (শেখর)




• বের করো যেয়ে,, সন্ধ্যার আগে যেয়ে আবিরের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে। (মেহেরাজ) 



 শেখর বেরিয়ে যায় মেহেরাজের কেবিন থেকে। আবির ছেলেটার চেহারা কি যেন একটা বলে। এমন বোকাসোকা চেহারা ওয়ালা মানুষ কে ই ব্যবহার করেছে মাফিয়া কিং রকি। কিন্তু মেহেরাজ একটা হিসাব এখনো মিলাতে পারছে না রকি কেনো আবির কে বেছে নিয়েছে । রকি চাইলেই কলেজের অন্য কাউকে নিজের বন্ধু বানাতে পারতো কিন্তু সে এটা না করে আবিরের মতো গরীব একটা ছেলেকেই কেনো বেছে নিয়েছে। রকির মতো এমন একটা ভয়ানক মাফিয়া, ছদ্মবেশ নিয়ে ঢাকা কলেজে এসেছে আর এসেই আবিরের সাথে বন্ধুত্ব করে নেয়। কিন্তু হঠাৎ ই আবার রকি হারিয়ে যায় শহর থেকে কোনো দূর অজানায়। এখন কোথায় আছে এই রকি। মেহেরাজ যদি কোনো ভাবে রকি কে ধরতে পারে তাহলে অনেক বড় প্রমোশন পাবে সে। রকির খোজ এখন একমাত্র আবিরই দিতে পারবে। 



……………….…….…..…



 এইমাত্র খাবার খেয়ে উঠেছে আবির, হাসপাতালের খাবার যেমন হয় আরকি,, এক প্লেট মোটা চাউলের ভাত,, বেশি পানি দিয়ে ডাল। আবির একদিনের বেশি সময় ধরে কিছু খায় নি,, আজকে  সকালে জ্ঞান ফিরার পরে ফলমূল ছাড়া অন্য কিছু খায় নি। বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে এখন মাত্র খেয়েছে আবির। শরীর টা এখন মোটামুটি ভালো। আবির যখন জানতে পেরেছে সন্ধ্যায় তাকে রিলিজ দেওয়া হবে তখনই মনের ভিতর অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে.। কিন্তু পরে আবার মন খারাপ হয়ে গেলো এটা জেনে যে সকালের সেই পুলিশ অফিসার মেহেরাজ সাহেব আবির কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা বাদ করবে। কি এমন প্রশ্ন করতে পারে মেহেরাজ যার কারণে আবিরের প্রতি এত যত্ন ওনার। জানা নেই আবিরের। 



 কেবিনের দরজাটা খোলার আওয়াজ পেয়ে আবির সেদিকে তাকায়। হু পুলিশ অফিসার  মেহেরাজ সাহেব  আর কনস্টেবল শেখর ভিতরে প্রবেশ করছে। আবির নিজের চশমা টা ঠিক করে নেয়। মুখটাকে একদম সহজ সরল স্বভাবের করে রাখে। যে কেউ আবির কে এমন দেখলে ইনোসেন্ট বয় হিসেবে আখ্যায়িত করবে। অথচ এই ছেলেটার কোনো এক সময়ের বন্ধু ছিলো বাংলাদেশের টপ মাফিয়া কিং এর। কেউ দেখলে আবির কে বলবে না সে এত বড় একটা ভয়ানক মাফিয়ার অতি কাছের বন্ধু। 


 আবির যেই  কেবিনে ভর্তি  সেখানে একটা স্ট্রিলের চেয়ার আছে । মেহেরাজ সেই চেয়ার টা টেনে বসে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে শেখর,, পুলিশের চাকরি টাই এমন বড় অফিসার চেয়ারে বসবে আর কনস্টেবল গুলো অফিসারের পাশে মূর্তির মতো করে দাঁড়িয়ে থাকবে। মেহেরাজ কে দেখে এখন আর তেমন ভয় লাগছে না আবিরের। অন্য সব পুলিশ অফিসারের মতো ব্যবহার করছে না । আবির অসুস্থ দেখে এমন ব্যবহার নাকি মন থেকেই এমন ব্যবহার করছে। 



 তিন জনের মধ্যে প্রথমে মেহেরাজ নিজের মুখ খুলে বলে :-



• এখন কেমন বোধ করছো আবির। (মেহেরাজ)



• এখন আমি আগের থেকে  অনেক টা সুস্থ  বোধ করছি। (আবির)



• শুনে খুব ভালো লাগলো। এখন আমি যে তুমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জিজ্ঞেস করবো সেই সমন্বয়ে ডাক্তার বা নার্স কিছু বলেছে তুমাকে। (মেহেরাজ)




 আবির মনে করার চেষ্টা করে দুপুরের দিকে একটা নার্স আসে। আর  এসেই বলে যায় আবিরকে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে তাকে। তার সাথে বিকেলের দিকে পুলিশ অফিসার মেহেরাজ সাহেব কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জিজ্ঞেস করতে পারে। এইটুকুই বলেছিলো নার্স টা। আবির সেই কথা চিন্তা করে সামনে বসে থাকা মেহেরাজ কে বলে:-



• স্যার দুপুরের দিকে একটা নার্স এসে তাহলে আপনার কথাই বলে গেছে আমাকে। (আবির)



• হতে পারে। আমি হাসপাতালে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছিলাম সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে তোমার সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ  কথা বলবো। (মেহেরাজ)




• স্যার আমি আপনার সব প্রশ্নের জবাব দিবো,, তার আগে আপনি আমাকে এটা বলেন যে আপনি আমার নাম টা জানলেন কোথা থেকে। আমি তো আপনাকে আমার নিজের পরিচয় দেই নি। (আবির)




• আমি একজন  পুলিশ অফিসার,, তোমাকে আমি প্রশ্ন করতে পারি কিন্তু তুমি  আমাকে উল্টো প্রশ্ন করতে পারো না। (মেহেরাজ)




• সেটা আমি জানি স্যার। তবে আপনি যদি আমাকে প্রশ্নের জবাব টা দিতেন তাহলে আমার মনে এত জানার আগ্রহ থাকতো না। (আবির)




• তুমার সম্পর্কে বসতির লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। এখন এই সকল টপিক বাদ দেও। আমার হাতে বেশি সময় নেই। আমি এখন যেই প্রশ্ন গুলো করবো সব গুলোর সঠিক উওর দিবে। (মেহেরাজ) 




মেহেরাজ যেই ভাবে কথা বলছে,, এখন তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে একজন কড়া পুলিশ অফিসার। আবির মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করে। মেহেরাজ এটা দেখে আবির কে প্রশ্ন করতে শুরু করে :-



• আবির কালকে সারা দিন কোথায় ছিলে তুমি। আর আজকে সকালে আমরা তুমাকে এই অবস্থায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। (মেহেরাজ)



 আবির মনে মনে এটাই ভাবছিলো,, পুলিশ অফিসার মেহেরাজ সাহেব প্রথমে এই প্রশ্ন টাই করবে। তাই আবির নিজের মাথায় এই প্রশ্নের উত্তর টা গুছিয়ে রেখেছিলো। যদি এই প্রশ্ন ছাড়া অন্য কোনো প্রশ্ন করতো তাহলেও আবির সঠিক উওর দেওয়ার চেষ্টা করতো। মেহেরাজের প্রশ্নের জবাবে আবির তার  সাথে যা ঘটেছে  সবকিছুই স্পষ্ট করে বলে দেয় মেহেরাজ কে। আবিরের এমন উত্তর শুনার পর মেহেরাজ অনেকটা অবাক হয়ে যায়। কারণ আজকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে যেই লাশ টা পাওয়া গেছে সেই লাশ টার সাথে আবিরের বর্ননার কাললে রাতে আবিরের উপর হামলা কারি লোকের সাথে মিল রয়েছে। তাহলে এখন একমাত্র খুনি হচ্ছে সেই রাতের আগন্তুক যে আবিরে কে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলো। আবির বলছে সে আগন্তুক কে চিনে না আবার আগন্তুক নাকি মাক্স পরিধান করে এসেছিলো যার কারণে ভালো করে মুখ দেখতে পারে নি আবির। 


মেহেরাজের এখন প্রচুর পরিমানে রাগ লাগছে দুই টা  কেসের সমাধান হবে তখন যখন সেই আগন্তুক ধরা পরবে। কিন্তু আগন্তুকের চেহারা কেমন সেটাই জানে না আবির। এবার মেহেরাজ আবির কে জিজ্ঞেস করে ;-



• আচ্ছা আবির আমি শুনেছি তুমি নাকি বাংলাদেশের টপ  মাফিয়া কিং রকির বন্ধু ছিলে। (মেহেরাজ)



• ছিলাম হয়তো এক সময় কিন্তু এখন না। (আবির)



• এখন রকির সাথে  বন্ধুত্ব আছে কি নাই, সেটা জেনে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি এটা  বলো যে রকি এখন কোথায়। (মেহেরাজ) 




• স্যার সবাই এট নিয়ে কি শুরু করেছেন আমি তা বুঝতে পারছি না। রকি কোথায় সেটা আমি কিভাবে বলবো। হঠাৎ সেইদিন নাহিদের সাথে ঝগড়া হওয়ার পর রকি যে কোথায় হাড়িয়ে গেছে আমি এটা জানি না। (আবির)



• দেখো আবির আমাদেরকে সত্যি টা বলে দেও। রকি একটা মাস্তান,, দেশ কে ধ্বংস করে ফেলবে সে। আমরা যদি তাকে ধরতে পারি তাহলে দেশ থেকে একটা আতংক কমে যাবে। (মেহেরাজ)




• আমি যতদূর পর্যন্ত জানি রকি ভয়ংকর মাস্তান হলেও সত্যির পথে সে চলে। খারাপ মানুষ গুলো কে সে বেছে বেছে মারে আর এতেই দেশ থেকে খারাপ মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। (আবির)




• খারাপ মানুষ কে শাস্তি দেওয়ার জন্য আইন আছে। সে কেন এগুলো করে মানুষের মন থেকে সুখ কেরে নিচ্ছে। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে বিচার করতাম। (মেহেরাজ)




• স্যার আপনি আমার কথা হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেন না। আসলে রকি আমার বন্ধু ছিলো ঠিকই  কিন্তু সে আমাকে শেষ কথা এটাই বলে গেছিলো সে আবার আসবে তবে  কোথায় সে। (আবির)




• আমি বুঝতে পারছি বিষয় টা। এখন তোমার সাথে রকির কোনো যোগাযোগ নেই। তাহলে কে নিয়ে যেতে পারবে আমাকে রকির কাছে।  (মেহেরাজ)




• আমি শুনেছি স্যার রকির একটা ভাই  আছে কিন্তু কি যে তার নাম সেটাই মনে পরছে না। আর সে থাকে কোথায় এটাও জানি না। (আবির)



• সবাই নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টা করছে। আমি রকি কে নিজ হাতে আমার থানার ১৪ সিকের ভিতর এনে  ভরবো। (মেহেরাজ) 




মেহেরাজের কথা শুনে আবির মুচকি হাসে। একটা সাধারণ পুলিশ অফিসার রকির মতো মাফিয়া কিং কে ধরে জেলে ঢুকাবে ভাবতেই অবাক লাগছে। এখন এটাই বিশ্বাস করতে হবে  আবির কে কারণ সামনে বসে আছে একটা পুলিশ তার সামনে যদি মাস্তানির পক্ষ নিয়ে কথা বলে তাহলে যা ঘটার তা তো ঘটেই যাবে। মেহেরাজ সাহেব আর কথা বাড়াতে চান না। এখানেই প্রশ্নবাদ শেষ করতে চান তিনি। আবিরের কেবিন থেকে চলে যায় মেহেরাজ সাহেব। 


-- তারপরই --


[ আপনারা গল্প পড়ে যদি লাইক কমেন্ট না করেন, তাহলে লিখার মন উঠে যায়। এই পাঠে আপনাদের সাপোর্ট পেলে পরবর্তী পাঠ তাড়াতাড়ি দিব। ]


wait for the next part. 


টোকাই যখন মাফিয়া কিং-- সিজন ২ - পর্ব:- ১



 মাফিয়া সিরিজ ১


# টোকাই যখন মাফিয়া কিং 

# RAJA Bhuiyan (মি.440)

#সিজন:- ২

#পর্ব:- ১


.................


 সময়টা  রাত  প্রায় দশটা বেজে একুশ  মিনিট  থানার ভিতর নিজের কেবিনে চেয়ারে বসে আছে মেহেরাজ হাতে  তার  জলন্ত  সিগারেট । মাথাটা উপরের দিকে করে বসে আসে সে। অনেক চিন্তা যখন মানুষের মাথায় ভিড়ে তখনই মানুষ উপরের আকাশের  দিকে চেয়ে অন্যমনষ্ক ভাবে সেই বিষয় টি নিয়ে ভাবতে থাকে। এক বস্তা চিন্তা এসে মাথায় বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না মেহেরাজ। নয় বছর ধরে পুলিশে আছে মেহেরাজ।  পুলিশের চাকরি জীবনে কখনো সে এরকম কেসের সম্মুখীন হয় নি।   কিছুক্ষন আগের ঘটনা টা নিয়ে বেশ গম্ভীর ভাবে চিন্তা করছে মেহেরাজ। 


[ একটু থামুন 🖐 আমি আগেই বলে দিচ্ছি যারা এই গল্পের সিজন ১ পড়েন নি তারা কিছু ই বুঝতে পারবেন না আগে যেয়ে সিজন ১ পড়েন।  ধন্যবাদ  ] এবার পড়তে শুরু করেন। ↓ 



কিছুক্ষণ আগে - - ☞



মেহেরাজ নিজের কেবিন বসে বসে পুরোনো কিছু ফাইল দেখছিলো তখনই তার কেবিনে প্রবেশ করে কনস্টেবল শেখর। মেহেরাজ নিজের হাতের ফাইল টা টেবিলের উপর রেখে শেখরের দিকে তাকায়,, উওেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে শেখর, সবুজ রঙের শার্টের ভিতরে ঘেমে একাকার শেখর বেশ ভালোই বুঝতে পারছে মেহেরাজ। তাকে  দেখে মনে হচ্ছে কোথাও থেকে দৌড়ানি খেয়ে এসেছে কিন্তু পুলিশ কে আবার কেউ দৌড়ানি দিবে কার এত সাহস। ভেবে পায় না মেহেরাজ। 




• শেখর থানার বাইরে এত আওয়াজ শুনা যাচ্ছে কেনো। মনে হচ্ছে অনেক লোক দাঁড়িয়ে থানার বাইরে ঝামেলা করছে। আর তোমার এমন অবস্থা কেন?  (মেহেরাজ)




• স্যার আমার কথা বাদ দেন!  বাইরে কি হচ্ছে সেটা আগে দেখবেন চলেন। বসে থাকলে বাইরের লোক গুলো আরো বেশি ঝামেলা করবে। (শেখর)



• মানে?  কি বলতে চাচ্ছো সেটা ভালো করে বুঝিয়ে বল আমাকে। (মেহেরাজ)



• স্যার আপনি আমার সাথে বাইরে চলেন তাহলেই বুঝতে পারবেন আমার কথা। (শেখর)




শেখরের কথার উপর ভিওি করে মেহেরাজ কেবিন থেকে বের হয়। থানার সামনে অনেক লোক  দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এত লোক এত রাতে থানার সামনে কি করছে। সবার মুখে একটাই কথা আবির কোথায়?  আমাদের আবির কে বের করে দিন। মেহেরাজ কিছুই বুঝতে পারছে না।  কে আবির?  এখানে এত লোকজন আসার মানে কি এই আবিরের জন্য। উওর টা নিজের মনেই করতে থাকে মেহেরাজ। 




• শেখর আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,, এত রাতে থানার সামনে লোকজন এমন অবস্থা করছে কেনো। কে আবির?  কোথায় আবির?  আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আমাকে একটু খুলে বলো সবকিছু। (মেহেরাজ)




• স্যার এখানে সবাই পাশের বস্তিবাসী,  সেখানে একটা ছেলে থাকতো তাদের সবার সাথে তার নামই আবির। গতকাল বিকেল থেকে সেই আবির কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছে আবির। এর জন্য মূলত সবাই এসে থানায় ভিড় জমিয়েছে। আপনি কিছু একটা করুন স্যার। (শেখর)




• শেখর আবির নামের ছেলেটার একটা ছবি নিয়ে সবাইকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে থানা থেকে বের করে দেও। আবির কে পেলে আমরা তাকে বস্তিতে দিয়ে আসবো। (মেহেরাজ)



মেহেরাজের এমন কথা শুনে নিজেই বোকা বনে যায়,, শেখর। এক মাস হয় নি এখনো মেহেরাজের এই থানায় যোগ দেওয়ার। নতুন এসেই বেশ কড়া নিয়ম করে দিচ্ছে এই নতুন অফিসার। শেখর আবিরের একটা ছবি সংগ্রহ করে,, বস্তিবাসী কে থানা থেকে বিদায় করে দেয়। 




• স্যার এই যে আবির নামের ছেলেটার ছবি। (শেখর)



 শেখরের হাত থেকে ছবির কাগজ টা নেয় মেহেরাজ। ছবির দিকে তাকায় তিনি,, ফোল সাইজের একটা ছবি, লম্বা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে  কাঁধে ব্যাগ নিয়ে। মুখে চাপ দাঁড়ি,, শরীরের রঙটা হালকা  চাপা  ফর্সা, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, পড়নে ঢিলেঢালা লম্বা হাতার কালো রঙের  একটা শার্ট,, কম দামি এক জোরা চটি পায়ে লেগে আছে। মেহেরাজ নিজেও বুঝতে পারছে না এমন একটা বোকা ছেলে হঠাৎ  আবার কোথায় উধাও হয়ে যাবে। 




• শেখর ছেলেটা কে দেখে মনে হচ্ছে অনেক বোকা টাইপের। আবিরের সম্পর্কে তুমি কি কি জানো। (মেহেরাজ)



• স্যার ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সেখানে গেলেই  জানা যাবে আবিরের সম্পর্কে। (শেখর)




• শেখর তুমি কি রকি কে চিনো। (মেহেরাজ)



• কোন রকি স্যার  মাফিয়া কিং? (শেখর)



• হু! মাফিয়া কিং রকি। সে ছদ্মবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো। কিছু দিন যেতে না যেতে হঠাৎ কোথায় যেন হাড়িয়ে যায় সে। (মেহেরাজ)




• রকি ভার্সিটির সভাপতির ছেলে নাহিদ কে স্টীক দিয়ে পুরো ভার্সিটির সকল স্টুডেন্টের সামনে পিটিয়েছিলো। ঐ দিনই ভার্সিটির শেষ দিন ছিলো রকির এর পর থেকে কেউ আর রকির চেহারা পর্যন্ত দেখে নি। (শেখর) 




• শেখর তুমি এখন আসতে পারো। (মেহেরাজ) 



শেখর বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে,, মেহেরাজ চিন্তা করছে এমন একটা বোকা ছেলেকে কে আবার গুম করে দিবে। আবিরের সাথে কারো শএুত্বা থাকবে এটা কিভাবে সম্ভব। আগেও  এমন অনেক কেসের সম্মুখীন হয়েছেন মেহেরাজ কিন্তু এমন কোনো রহস্যময় কেসে কখনো সম্মুখীন হয় নি। মেহেরাজ নিজে একজন বড় মাইন্ড গেমার,, বড় বড় কেস একা সামলেছে তিনি কিন্তু এই টা কিভাবে সব কিছুই ধোঁয়াসা।  হাতে থাকা সিগারেট শেষ হয়ে এসেছে। কালকে সকালে ভার্সিটিতে গেলেই জানা যাবে আবিরের সম্পর্কে ততক্ষণ পুরনো কেসের ফাইল গুলো দেখতে থাকে মেহেরাজ৷ 



...................



 স্যার, স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটা লাশ পাওয়া গেছে। মানুষজন আতংকিত হয়ে গেছে। 


 সকাল  নয়টা মেহেরাজ নিজের কেবিনে বসে বসে সদ্য গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো তখন তার কেবিনে প্রবেশ করে শেখর চোখে তার ভয়ের আভাস স্পষ্ট দেখতে পারছে মেহেরাজ। লাশের কথা শুনেই গরম চা টা টেবিলের উপর রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তিনি। পিস্তল টা কোমরের কাভার পয়েন্টে রাখে। টেবিলের উপর থেকে পুলিশের কালো কালারের লাঠি টা হাতে নেয় মেহেরাজ। গড়িতে যেয়ে বসে তিনি,,  উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে।




 একটা  লাশ রাস্তায় পরে আছে  কাফনের  কাপড় দিয়ে মুড়ানো। আশেপাশে কেমন যেন একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হয়তো এটা লাশের তাজা গন্ধ৷ মানুষজন মুখে কাপড় দিয়ে গন্ধ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। এখনো লাশের মুখ কেউ দেখছে না, পুলিশ ছাড়া কেউ হাত দিতে সাহস পাচ্ছে না। মেহেরাজের হাতের ইশারায় শেখর যেয়ে ভয়ে ভয়ে লাশের কাফনে মুড়ানো মুখ টা খুলে দেয়। মৃত ব্যক্তির মুখ টা দেখে ভিষণ ভয় পেয়ে যায় শেখর। কারণ মৃত ব্যক্তির মুখ টা কিছুই বুঝা যাচ্ছে না মনে হয় কেউ বড় পাথর দিয়ে মুখটা থেতলিয়ে দিয়েছে। মুখ দেখে লাশ টা সনাক্ত করা সম্ভব না, মেহেরাজ লাশ টা পোস্টমর্টেম জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়। শহরের অবস্থা বেশি একটা ভালো না সবাই আতংকিত। একদিন পরে পরে এমন মানুষ খুন হয়েই যাচ্ছে  , পুলিশ অফিসার রা খুনি কে এখনো ধরতে পারে নি। তাহলে কি এমন ভাবে শহরে খুন হতেই থাকবে। আর খুনি সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিলিয়ে যাবে। এখন অপেক্ষা পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য। 



.............



 প্রায় দুই ঘন্টা পর মেহেরাজের হাতে পোস্টমর্টেমের ফাইনাল রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট টা দেখে মেহেরাজ অনেক অবাক, কারণ - রিপোর্টে এসেছে,, লাশ টা একজন ছেলের।   মৃত ব্যক্তিকে কেউ গুলি করে মেরেছে প্রায় ছয়টা বুলেট শরীর থেকে  পাওয়া যায়। ছেলেটা মারা যাওয়ার পরও খুনি নিজের রাগ কমাতে বড় পাথর দিয়ে মৃত ব্যক্তির মুখ মন্ডলে মেরেছে। কোনো সাইকো টাইপের লোক ছাড়া এমন খুন কেউ করতে পারবে না। দুইটা কেস সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক আবিরের নিখোঁজ, দুই সকলের খুনের তদন্তের। কখনো এমন নাজেহাল অবস্থায় পরে নি মেহেরাজ। 



.....................



 টিপ টিপ করে চোখ জোরা মেলে তাকায় আবির। নিজেকে কোন নরম বিছানার উপর আবিষ্কার করে সে,, আশেপাশে তাকায় সে, হাতের বাম পাশে ইনজেকশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যে বয়সী  একটা মহিলা পরনে তার সাদা কালারের নার্সের ড্রেস,, আবির বুঝে গেছে সে কোনো হাসপাতালের বেডের উপর সুয়ে আছে। হাতের ডান পাশে পুলিশের পোশাক পড়ে গম্ভীর মুখো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশ  অফিসার। পিছনে  দাঁড়ানো  একটা পুলিশ কনস্টেবল। ছোট থেকেই আবির পুলিশ কে ভয় পায়,, এখনও তেমন ভয় পাচ্ছে। আবির উঠে বসার চেষ্টা করে সাথে সাথে বাম  হাতে  হালকা ব্যথা অনুভব করে, আবিরের শরীরে স্যালাইন চলছে। আবির কে চোখ খুলা অবস্থায় দেখে ডান পাশে দাঁড়ানো পুলিশ অফিসার মেহেরাজ বলে। 




• আবির তুমি অনেক টা দুর্বল একটু রেস্ট করো এখন উঠে বসার প্রয়োজন নেই । (মেহেরাজ)



আবির অবাক হয় কারণ অচেনা অজানা একটা পুলিশ অফিসার আবিরের নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু এই পুলিশ অফিসারের সাথে আবিরের কখনো দেখা বা কথা হয় নি তাহলে নাম কিভাবে জানলো। ভেবে পায় না আবির। কিছুই স্পষ্ট দেখতে পারছে না আবির,, নিজের মাইনাস ওয়ান পয়েন্টের চশমা টা নিজের চোখে নেই। 




• আমার চশমা,, আমার চশমা কোথায়?  আমি সব কিছু অস্পষ্ট দেখছি। (আবির)



• আবির উওেজিত হবার কোনো কারণ নেই। তুমার চশমার স্ত্র্যাচ টা ভেঙে গেছে, তুমার জন্য নতুন একটা চশমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। (মেহেরাজ)



 বেডের পাশে টেবিলের উপর রাখা মোটা ফ্রেমের চশমাটা মেহেরাজ আবিরের হাতে দেয়। আবির চশমা টা চোখে লাগায় এখন সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। 



• আবির এখন কেমন লাগছে তুমার? (মেহেরাজ)



• জ্বি ভালো! কিন্তু মাথায় অনেক ব্যথা করছে। কেমম যেন লাগছে মনে হয় মাথার ভিতর কিছু চলছে। (আবির)



• সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে তুমি এখন রেস্ট করো আমরা তুমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছি। (মেহেরাজ) 


কথাটা বলেই বেরিয়ে যায় মেহেরাজ সাথে শেখরও। 


............



 আবির সামনের দেয়ালের দিকে তাকায়,, দেয়াল ঘড়িতে এখন সময় সকাল এগারোটা । সে  মনে  করার চেষ্টা করে কালকের ঘটনা। ভার্সিটির উদ্দেশ্য যখন বাসা থেকে বের তখনই তার সামনে একটা গাড়ি থামে,, আবির কিছু বলবে এর আগেই গাড়ির  ভিতর থেকে কেউ আবিরের মুখের রুমাল চেপে ধরে,, সে অজ্ঞান হয়ে যায়। প্রায় আট ঘন্টা পর আবিরের জ্ঞান ফিরে। নিজেকে কোনো বদ্ধ রুমে আবিষ্কার করে সে। মাথার উপর জ্বলছে ষাট ওয়াটের একটা হলদে বাল্ব। আশেপাশে পুরনো অনেক জিনিস পত্র রাখে দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কেউ অনেক দিন ধরে ব্যবহার করে না। খুবই গরম রুমের ভিতর,, হঠাৎ রুমের সাটার টা উঠিয়ে একটা ছেলে  ভিতরে প্রবেশ করে। ছেলেটার হাতে ভয়ংকর একটা ধারালো  ছুরি। আবিরের সামনের চেয়ারের উপর আরাম করে বসে ছেলেটা। 




• কেমন আছিস মাফিয়া কিং এর বন্ধু? (ছেলেটা)



আবির  বুঝতে পারছে না ছেলেটা কেন মাফিয়া কিং এর বন্ধু বলছে। আবির  বোকাসোকা চেহারা করে বলতে থাকে... 



• মাফিয়া কিং এর বন্ধু মানে! কি বলছেন আপনি। (আবির)



• হাহাহাহাহা,, কেন বুঝতে পারছিস না আমি কি বলছি। নাকি বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করছিস। 




• সত্যি ভাইয়া আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না । দয়া করে আমাকে বুঝিয়ে বলেন। (আবির)




• বাংলাদেশের  টপ মাফিয়া কিং রকি ভাই,, তর বন্ধু ছিলো না। একই সাথে একই ভার্সিটিতে পরতি তরা দুইজন। কোথায় এখন রকি সেটা বল আমাকে। (ছেলেটা)




আবির মনে করার চেষ্টা করে রকির কথা সেইদিন ভার্সিটিতে নাহিদের সাথে ঝামেলা করার পর থেকে রকির সাথে আর দেখা হয় নি আবিরের। রকি বলে গিয়েছিলো দেখা হবে কিন্তু এখন আবিরের সাথে দেখা হয় নি রকির। 




• আমার  সাথে রকির কোনো যোগাযোগ নেই। সেইদিন ভার্সিটিতে ওর সাথে আমার শেষ দেখা হয় এর পর আর দেখা হয় নি। আমি জানি না রকি কোথায়। (আবির)




আবিরের কথাটা বিশ্বাস করে না ছেলেটা। ধারালো ছুরি টা হাতে নিয়ে বলতে থাকে.... 



• সত্যি কথা বল বেঁচে যাবি! নয়তো এই চুরি টা দিয়ে এখনই শেষ করে দিবো। বল রকি কোথায়। (ছেলেটা) 




ছুরিটা দেখে আবির ভয় পেয়ে যায়। গলার পানি শুকিয়ে গেছে,, একটা ঢুক গিলে গলাটা হালকা ভিজিয়ে নেয় সে। ভয় কাতর গলায় বলতে থাকে.... 



• ভাই আমার কথাটা বিশ্বাস করেন,, আমার সাথে রকির কোনো দেখা হয় নি। আমাকে মারবেন না দয়া করে। ছেড়ে দেন প্লিজ। (আবির)




• মিথ্যা সব কিছু মিথ্যা,, তুই একমাত্র জানিস রকি এখন কোথায় আছে। তর সময় শেষ মৃত্যুর প্রহর গুনতে শুরু কর এখনই। (ছেলেটা)




কথাটা বলে ছেলেটা ধারালো ছুরি টা নিয়ে  আবিরের গলার  দিকে নিতে থাকে। আবির ভয় পেয়ে যায়। ছুরি টা আবিরের গলায় চালিয়ে দিবে এমত অবস্থায়,, রুমের সাটারে ঠাস ঠাস করে আওয়াজ হয়। ছেলেটা ছুরি টা নামিয়ে নেয়। আবির হাফঁ ছেড়ে বাঁচে,  হয়তো সৃষ্টিকর্তা আবিরকে বাঁচাতে কাউকে পাঠিয়েছেন। ছেলেটা ভয়ে ভয়ে সাটারের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে.... 




• বাইরে কে?  কে সাটার ধাক্কা মেরেছে!  কোন সালা বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস, কথা বলছিস না কেনো। (ছেলেটা) 



বাইরে থেকে কোনো প্রতি উওর আসে না,, ছেলেটা রেগে রুমের সাটার টা উপরের দিকে তুলে। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কোনো এক অচেনা আগন্তুক। আবির আর ছেলেটার স্তম্ভিত দৃষ্টির সামনে দিয়ে নীরবে এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক টা শূন্য চেয়ারে বসে পরে। নিশ্চল নিরব। আগন্তুক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরে ঝুলে থাকা বাল্বের সহস্র আলোকরশ্মির কেন্দ্রস্থলে। ষাট ওয়াটের হলদে আলো- পরিসীমার মধ্যে কালো কালারের রকস্টার ড্রেস মুখে ভুতুড়ে মাক্স জ্বলজ্বল করছে। পিছন থেকে ছুরি হাতে নিয়ে এগুলো থেকে ছেলেটা আগন্তুকের দিকে। 




• এই কে তুই?  এখানে আসলি কি করে! আমার চেয়ারে বসে পড়লি। ভালোই ভালোই বলছি এখান থেকে চলে যা নয়তো তর অস্তিত্ব বিলীন করে দিবো। (ছেলেটা) 




আগন্তুক উচ্চ সরে হেসে উঠে। ওর মনের ভিতর মনে হয় না মৃত্যুর কোনো ভয় আছে। আবির বাঁচার ভরসা পায়। মৃত্যুর সামনে থেকে বাঁচার এটাই বড় সুযোগ। 




• কি রে তুই এমন করে হাসছিস কেনো,, মরার ভয় নেই। দাঁড়া তকে আর বেশি সুযোগ দেওয়া যাবে না। তকে মেরে আবির সালাকেও মেরে দিবো। (ছেলেটা)



কথাটা বলে ছেলেটা ধারালো ছুরি  আগন্তুকের পিছন দিয়ে আঘাত করবে। এর আগেই আগন্তুক পায়ের কাভার পয়েন্ট থেকে ছোট একটা পিস্তল বের করে,, পর পর দুইটা গুলি করে,, একটা বুলেট এসে ছেলেটার তল পেটে লাগে আরেকটা মিছ ফায়ার হয়ে পিছনের দিকে চলে যায়। ছুরি হাতে ছেলেটা নিচে পরে যায়, আগন্তুক বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ছেলেটার বুকের উপর ডান পা টা রেখে পিস্তলের সব গুলো বুলেট খরচ করে ছেলেটার উপর। এর পর কি হয় জানে না আবির। 





হাসপাতালের বেডের উপর সুয়ে সুয়ে এগুলো ভাবছিলো আবির তখনি রুমের দরজা ঠেলে একটা লোক প্রবেশ করে আবির লোকটাকে দেখে হালকা ভয় পেয়ে যায়। কারণ.......


[ সাড়া পেলে পরের পাঠ তাড়াতাড়ি দিব ]


wait for the next part. 


KGF of Diamond City. ৪ # লিখা :- RAJA Bhuiyan. (মি.440) # পর্ব :- ০ ৪

 # গল্প :- KGF of Diamond City. ৪ # লিখা :- RAJA Bhuiyan. (মি.440) # পর্ব :- ০ ৪ ............. আকাশে তাজা সূর্যের তীব্র আলো। শকুন আর গাংচিলদ...